পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র - বিচ্ছুরণ

    আমরা দেখেছি যে, সূর্যের সাদা আলো যদি কোনো কাচের প্রিজমের মধ্য দিয়ে যায় তাহলে তা সাতটি রঙে বিশ্লিষ্ট হয় । প্রিজম থেকে নির্গত রশ্মিগুলোকে যদি কোনো পর্দার উপর ফেলা যায় তাহলে পর্দায় সাতটি রঙের পট্টি (Band) দেখা যায়। আলোর এই রঙিন পট্টিকে বর্ণালি (Spectrum) বলে। প্রিজমের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় সাদা রঙের আলো সাতটি মূল রঙের আলোকে বিশ্লিষ্ট হওয়ার প্রণালিকে আলোর বিচ্ছুরণ বলে। 

    কোনো মাধ্যমে প্রতিসরণের ফলে যৌগিক আলো থেকে মূল বর্ণের আলো পাওয়ার পদ্ধতিকে আলোর বিচ্ছুরণ বলে।

পরীক্ষা : 

 ৷ ১৬৬৬ সালে স্যার | আইজ্যাক নিউটন একটি সহজ পরীক্ষার সাহায্যে সর্বপ্রথম আলোর বিচ্ছুরণ আবিষ্কার করেন। তিনি তাঁর ঘরের জানালায় একটি ছোট ছিদ্র করে এই পরীক্ষা করেন। অন্ধকার ঘরে জানালার এই ছোট ছিদ্র দিয়ে সূর্যালোক বিপরীত দিকে দেওয়ালের উপর পড়ে। এখন  আলোর গতিপথে একটি প্রিজম স্থাপনকরে তিনি দেওয়ালে সাদা আলোর পরিবর্তে সাতটি রং দেখতে পান [চিত্র ৬.২০)। সাতটি রঙের এই পট্টিকে নিউটন  বর্ণালি আখ্যা দেন। 

চিত্র : ৬.২০

বর্ণালিতে তিনি বেগুনি (Violet), নীল (Indigo), আসমানী (Blue), সবুজ (Green), | হলুদ (Yellow), কমলা (Orange) ও লাল (Red)-এ সাতটি রং পর পর দেখতে পান। রংগুলোর নাম ও ক্রম | সহজে মনে রাখার জন্য এদের নামের আদ্যাক্ষরগুলো নিয়ে ইংরেজিতে VIBGYOR ও বাংলায় বেনীআসহকলা শব্দ গঠন করা হয়।

      বর্ণালি থেকে দেখা যায় যে, লাল রঙের আলোর বিচ্যুতি সবচেয়ে কম এবং বেগুনি আলোর বিচ্যুতি সবচেয়ে বেশি। হলুদ রঙের আলোর বিচ্যুতি লাল ও বেগুনি আলোর মাঝামাঝি বলে এর বিচ্যুতিকে গড় বিচ্যুতি বলে এবং হলুদ রশ্মিকে মধ্যরশ্মি বলে।

   এ পরীক্ষা থেকে নিউটন এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, সূর্যের সাদা আলোর প্রকৃতি যৌগিক (Composite) এবং এই আলো সাতটি মূল রঙের আলোর সমষ্টি।

নিজে কর : কোনো সরু ছিন্ন পথে আসা সাদা আলোকে একটি প্রিজমের সাহায্যে সাতটি রঙে বিশ্লিষ্ট করে বর্ণালি গঠন কর।

 

  বর্ণালি উৎপত্তির কারণ

      কোন মাধ্যমে প্রতিসরণের ফলে যৌগিক আলোর বিচ্ছুরণের জন্য মূল রংগুলোর যে পট্টি পাওয়া যায় তাকে বর্ণালি বলে।

        আমরা জানি, আলোক রশ্মি যখন এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অপর স্বচ্ছ মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন আলোক রশ্মি বিভেদতলে বেঁকে যায় । এই বাঁকার পরিমাণ মাধ্যমম্বরের প্রকৃতি ও আলোর রঙের উপর নির্ভর করে। সূর্যের সাদা আলো সাতটি রঙের সমন্বয়ে সৃষ্টি তাই যখন সূর্যের সাদা আলো কোনো প্রিজমের মধ্যে প্রবেশ করে তখন প্রতিসরণের ফলে রশ্মির গতিপথ বেঁকে যায়। এখন ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের আলোর বাঁকার পরিমাণ ভিন্ন হওয়ার জন্য প্রিজমের মধ্যে সাদা আলো সাতটি বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয় এবং এই বিশ্লিষ্ট অবস্থায়ই প্রিজম থেকে নির্গত হয়। ফলে পর্দার উপর আমরা বর্ণালি দেখতে পাই । এখন প্রশ্ন হচ্ছে বর্ণভেদে আলোক রশ্মির বাকার পরিমাপ বিভিন্ন কেন? শূন্য মাধ্যমে সবক'টি বর্ণের আলোক রশ্মি একই বেগে চলে। কিন্তু অন্য যে কোনো মাধ্যমে এক এক বর্ণের আলোর বেগ এক এক রকমের হয়। যেমন কাচের মধ্যে লাল রঙের আলোর বেগ, বেগুনি রঙের আলোর বেগের প্রায় 1.8 গুণ বেশি। তাই বেগুনি আলো সবচেয়ে বেশি এবং লাল আলো সবচেয়ে কম বাঁকে। ফলে বর্ণালি উৎপন্ন হয়। এ কারণে একই মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক ভিন্ন ভিন্ন রঙের জন্য বিভিন্ন হয়। সুতরাং বলা যায়, বিভিন্ন বর্ণের আলোর জন্য মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্কের বিভিন্নতার জন্য বর্ণালি উৎপন্ন হয়।

কৌণিক বিচ্ছুরণ ও বিচ্ছুরণ ক্ষমতা

সরু প্রিজমের মধ্য দিয়ে একবর্ণের রশ্মি নির্গত হলে ঐ রশ্মির বিচ্যুতি,

δ = (μ - 1 ) A..(6.26)

এখানে, A= প্রিজমের প্রতিসরক কোণ 

μ= ঐ বর্ণের আলোর সাপেক্ষে প্রিজমের প্রতিসরাঙ্ক

এখন একটি পাতলা প্রিজমের ওপর সাদা আলো আপতিত হয়ে নির্গত হলে আলোক রশ্মি লাল থেকে বেগুনি পর্যন্ত সাতটি বর্ণের রশ্মিতে বিচ্ছুরিত হয় এবং প্রত্যেক রশ্মির বিচ্যুতিও ভিন্ন হয়। লাল ও বেগুনি আলোর জন্য বিচ্যুতি যথাক্রমে δ1, ও δ2, হলে,

δ =(μr- 1 ) A.. (6.27)

এখানে, μ1ও μ2যথাক্রমে লাল ও বেগুনি আলোর সাপেক্ষে প্রিজমের উপাদানের প্রতিসরাঙ্ক। লাল ও বেগুনি

আলোর মধ্যবর্তী বিচ্যুতিকে কৌশিক কিছুরণ বলে।

বিচ্ছুরণের মান প্রিজম উপাদানের প্রতিসরাঙ্কের উপর নির্ভর করে।

প্রতিসরাঙ্ক যত বেশি হবে বিচ্ছুরণের পরিমাণও তত বেশি হবে। বিভিন্ন পদার্থের তৈরি প্রিজমের বিচ্ছুরণ ঘটানোর ক্ষমতাও বিভিন্ন।

Content added || updated By

Promotion